গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায় - বিস্তারিত পড়ুন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মা ও শিশু উভয়ের জন্য ঝুকিপূর্ণ। এটি প্রথমবার গর্ভাবস্থার সময় রক্তে অতিরিক্ত শর্করার (Glucose) উপস্থিতির মাধ্যমে শনাক্ত হয়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস তখনই দেখা দেয় যখন গর্ভবতী নারীর শরীর ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি করতে ব্যর্থ হয় অথবা ইনসুলিন কার্যকর ভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত গর্ভধারণের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ধরা পড়ে।
এ সময়ে নবজাতকের ওজন বেড়ে যেতে পারে, সময়ের আগেই প্রসব অথবা প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে। এজন্য নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা, সুষম খাদ্য, ব্যায়াম ও প্রয়োজনে ইনসুলিন বা ওষুধের মাধ্যমে এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে গর্ভাবস্থার পর বেশিরভাগ মায়ের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস চলে যায়। কিন্তু ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
পেজসূচিপত্র: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
সঠিক খাদ্যগ্রহণ
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমাদেরকে খাদ্যের উপর মনোযোগ দিতে হবে। সঠিক খাদ্য নির্বাচন আমাদেরকে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, বাদাম, ওটস খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও কম চর্বিযুক্ত এবং ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। তবে প্রক্রিয়াজাত, ভাজা খাবার ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। দৈনিক অল্প অল্প করে পাঁচ থেকে ছয় বার খেতে হবে।
শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয় গর্ভধারণের আগে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে। যদিও এটির কোন নিশ্চয়তা নেই, তবে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ কররত পারলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। সেজন্য নিয়মিত শর্করা পরীক্ষা করতে হবে এবং শরীরে শর্করার পরিমাণ কতটুকু তা জানতে হবে এবং সেটা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করা
গর্ভাবস্থার উপযোগী এমন হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, হালকা যোগব্যায়াম ইত্যাদি করতে পারলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এছাড়াও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত হয় এমন ব্যায়াম গুলো করা যেতে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে শরীরের ওজন ও নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কিছুটা কমানো সম্ভব। কেননা অতিরিক্ত মানসিক চাপ রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই আমাদেরকে বিশ্রাম ও মানসিক প্রশান্তি দুটোই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেজন্য মেডিটেশন করা যেতে পারে।
হাইড্রেটেড থাকা
একটি সঠিক হাইড্রেশন স্তর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকটা সাহায্য করতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
গর্ভধারণের আগে ওজন বেশি থাকলে আমাদেরকে সেটি কমানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যসেবকের পরামর্শ অনুযায়ী ওজন বৃদ্ধি থাকা উচিত।
চিকিৎসকের পরামর্শ
যদি খাদ্য ও ব্যায়াম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হয় তবে সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন বা ওষুধ নিতে হবে। তবে সেটি অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসক হতে হবে। কেননা তিনি সঠিকভাবে আপনার অবস্থান পর্যালোচনা করে তারপর চিকিৎসা দিতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণ যোগ্য অবস্থা, যা সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে সুস্থভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব। তাই গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা নিয়মিত পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মানসিক প্রশান্তি আসে এমন কাজের সাথে যুক্ত থাকবো। তাহলেই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।
BD Health Net এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url