খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা

করলা (Momordica charantia) নানান পাকৃতিক গুনে ভরপুর যা যুগ যুগ ধরেই আয়ুর্বেদিক ও প্রাচীন চিকিৎসায় এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। যদিও এর স্বাদ একটু তিক্ত তবে এর ভিতরে লুকিয়ে আছে অসংখ্য স্বাস্থ্যগুণ। করলা আমরা শুধু যে জুস হিসেবে খেয়ে থাকি তাই নয় এর পাশাপাশি সবজি হিসেবেও খেয়ে থাকে। 

ছবি

প্রকৃতি মহারোগের ঔষধ। প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তন্মন্ধে করলা একটি। করলার জুস আমাদের শরীরের নানান উপকারে আসে। যেমন হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এবং সেই সাথে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। 

পেজসূচিপত্র: খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা 

পাচনতন্ত্রের উন্নতি

  1. করলা প্রাকৃতিক ভাবে Momordicin নামক এনজাইম ধারণ করে। যা পাকস্থলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই এনজাইমের দরুণ খাবার সহজেই ভেঙে যায় এবং হজম হয়।
  2. আমরা জানি খাদ্য হজমের ক্ষেত্রে পিত্তরসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পাকস্থলীতে এই পিত্তরসের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে করলার জুস। 
  3. গ্যাসের সমস্যা ও সমাধান করতে পারে করলার জুস। এছাড়াও দেহের অম্লত্ব বজায় রাখে।
  4. আমাদের পাকস্থলীতে যেসব ব্যাকটেরিয়া খাদ্য হজমে সহায়তা করে। সেই সকল ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতেও করলার জুস ভূমিকা পালন করে।
  5. করলা ও করলার জুসের থাকা ফাইভার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

করলাতে থাকা প্রাকৃতিক গুনাগুন ত্বকের জন্য অনেক উপকার। করলাতে ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন ও অন্যান্য এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের ক্ষতিকর রেনু দূর করতে সাহায্য করে। সেই সাথে বয়সের ছাপ দূর করে এবং সমান টোন বজায় রাখে। করলার জুসে থাকা পানি ও পুষ্টিগুণ ত্বককে প্রাণবন্ত, কোমল ও মসৃণ করে রাখে। করলার জুসে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য ত্বকে ব্রণ ও ফুসফুড়ির ঝুকি কমায় এবং ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

যে সকল খাদ্যে ক্যালরী কম কিন্তু পুষ্টি বেশি সে সকল খাবার খেলে ওজন কমে কিন্তু শরীর দুর্বল হয় না। ঠিক তেমনি করলাতেও ক্যালোরি কম কিন্তু পুষ্টিগুনে ভরপুর। তাই করলার জুস নিয়মিত খেলে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষুধা কমে যায়। যার জন্য কম খাওয়া হয় এবং ওজন কমে যায়। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে করলায় থাকা বিশেষ কিছু উপাদান শরীরের ফ্যাট সেল ভাঙতে সাহায্য করে। যার ফলে চর্বি কমে যায়।

ছবি

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

করলার জুসে রয়েছে ভিটামিন সি এ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও দেহের শ্বেত রক্তকণিকার কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের রোগজীবাণুর সাথে যুদ্ধ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। করলার জুস লিভার, কিডনি ও রক্ত কে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের শরীর খুব সহজেই অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে পারে।

হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে

করলার মধ্যে থাকা চ্যারান্টিন (charantin) নামক ‍উপাদানের জন্য রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এছাড়াও ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমরা জানি ইনসুলিন এক প্রকার হরমোন যার অভাবে  PCOS (Polycystic Ovary Syndrome) সহ বিভিন্ন হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

ডিটক্সিফিকেশন 

ডিটক্সিফিকেশন শব্দের অর্থ হলো দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে দেওয়া। করলার জুস খেলে আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের হয়ে যাবে তাহলে শরীরে আর কোন রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। সেই সাথে লিভার কিডনির কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলবে। যা আমাদেরকে একটি সুস্থ ও সুন্দর স্বাস্থ্য উপহার দিবে। সুস্থ শরীর মানে সুন্দর জীবন। তাই করলার জুস আমাদের নিয়মিত না হলেও সপ্তাহে দু-একবার খাওয়া উচিত।


পরিশেষে আমরা যদি সুন্দর এবং প্রাণবন্ত স্বাস্থ্য পেতে চায় তাহলে প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে আমাদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে। যার মধ্যে করলা অন্যতম। করলাতে থাকে অসংখ্য প্রাকৃতিক ভেষজ যা আমাদের রোগ বালাই দূর করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে এবং দেহে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবে।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

BD Health Net এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url