দাদ থেকে মুক্তির উপায় - ঘরোয়া চিকিৎসা
দাদ (Ringworm) বর্তমান সময়ে আমাদের এই উপমহাদেশে মারাত্মক একটি চর্মরোগ হিসেবে ধরা হয়। যদিও এটি সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা তবুও বিরক্তিকর একটি চর্মরোগ। যা মূলত ছত্রাকজনিত সংক্রমণ এর ফলে হয়ে থাকে এবং গোলাকার দাগ ও চুলকানি সুষ্টি করে।
অনেকেই শুরুতে এটিকে গুরত্ব না দেওয়ায় ধীরে ধীরে বেড়ে যায় এবং মারাত্মক অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে। তবে প্রাথমিক ভাবে এই রোগের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দ্রুতই সেরে যায়। চলুন এখন জেনে নেয় প্রাথমিক ভাবে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দাদ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
পেজসূচিপত্র: দাদ থেকে মুক্তির উপায়
নিমপাতা এর ব্যবহার
নিমপাতা প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পূর্ণ এবং ছত্রাক কে প্রাকৃতিকভাবে নষ্ট করে। এছাড়াও রাসায়নিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকায় অনেকেই ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে নিম পাতা দাদের আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করে থাকেন। এজন্য কচি নিমপাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে দিনে ২–৩ বার লাগাতে হবে। অথবা নিমপাতা পানির সাথে মিশিয়ে গরম করার পর সেই পানি ঠান্ডা করে আক্রান্ত স্থান ধুয়ে নেওয়া যায় অথবা উক্ত পানি দ্বারা গোসল করে নেওয়া যায়। এর মাধ্যমে সহজেই দাদ আক্রান্ত স্থান ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস বিহীন হয়ে পড়ে এবং দাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হলুদের ব্যবহার
হলুদে প্রাকৃতিকভাবে কারকিউমিন (Curcumin) থাকে যা ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করে। এছাড়াও দাদ এর জন্য সৃষ্ট ত্বকের লালচে ভাব ও চুলকানি কমাতেও হলুদ সহায়তা করে। সেই সাথে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ রুখে দিতে সহায়তা করে। এজন্য বিশুদ্ধ হলুদের গুড়া পানি বা নারকেল তেল এর সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। তবে একদম হলুদের উপর নির্ভর থাকা যাবে না যদি দাদ বেশি সরিয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: এলার্জি চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
রসুনের ব্যবহার
প্রাকৃতিকভাবে দাদ নিরাময়ের ক্ষেত্রে রসুন (Garlic) অনেক উপকারি হতে পারে। কেননা রসুনে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান — বিশেষ করে অ্যালিসিন (Allicin) নামক যৌগ। যা ছত্রাক ধ্বংশ করতে সহায়তা করে। যেভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা হলো কয়েক কোয়া রসুন খোসা এড়িয়ে পেস্ট করে উক্ত স্থানে লাগাতে হবে। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর হালকা গরম পানি দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে। তবে সংবেদনশীল ত্বকে সরাকরি রসুন লাগানো থেকে বিরত থাকা ভালো কেননা এতে জ্বালা পোড়া সৃষ্টি হতে পারে। জ্বালা পোড়া এড়াতে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
লবঙ্গের পেস্ট এর ব্যবহার
লবঙ্গ (Clove) একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা অসংখ্য গুনাগুণে ভরা। এতে ইউজেনল নামক একটি যৌগ থাকে যা ছত্রাক এর বিস্তার কে রুখে দেয়। তাছাড়াও চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও দাদ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সহায়তা করে। এজন্য কিছু লবঙ্গ গুড়া করে পানি বা নারকেল তেল এর সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাদ যুক্ত স্থানে লাগিয়ে ধুয়ে নিন এবং জায়গাটি শুকনো রাখুন। তবে অবশ্যই সংবেদনশীল ত্বকে সরাসরি লাগানো হতে বিরত থাকুন।
সতর্কতা
দাদ (Ringworm) নিয়ে বেশ কিছু সতর্কতা রয়েছে যেগুলো আমাদের অবশ্যই পালন করতে হবে।
- প্রথমত সর্বাবস্থায় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। প্রতিদিন গোসল করতে হবে এবং আক্রান্ত স্থান ধুয়ে শুকনো রাখতে হবে। কেননা ছত্রাক আর্দ্র পরিবেশে দ্রুত ছড়ায়।
- আক্রান্ত স্থান হাত দিয়ে চুলকানো যাবে না। এতে করে দাদ অন্যত্র ছড়িয়ে যেতে পারে।
- নিজস্ব তোয়ালে, কাপড়, বিছানা ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে সংক্রমণ রোধ করতে।
- খুব টাইট জামাকাপড় না পড়ে ঢিলে ঢালা জামাকাপড় পরতে হবে। কেননা এতে বাতাস চলাচল করতে পারবে যার মাধ্যমে উক্ত স্থান শুকনো থাকবে।
- অনেক সময় পোষা প্রাণীদের থেকেও দাদ ছড়াতে পারে। তাই তাদেরকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
চিকিৎকের পরামর্শ
দাদ এর সংক্রমণ যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু এন্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ক্লোট্রিমাজল, কেটোকোনাজল বা টারবিনাফিন জাতীয়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসক কিছু এন্টিফাঙ্গাল ট্যাবলেটও দিয়ে থাকেন যেমন Fluconazole, গ্রিসিওফালবিন ইত্যাদি। তাই যদি দাদ অতিরিক্ত ছড়িয়ে পড়লে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
BD Health Net এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url