মানসিক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা - স্বাস্থ্য তথ্য
বর্তমান সময়ে আমাদের মাঝে মানসিক রোগ বিরাট আকার ধারণ করেছে যা আমাদেরকে শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা আমাদের স্বাধীন চিন্তা চেতনাকে প্রভাবিত করে। মানসিক রোগ অনেক কারণেই হতে পারে তবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন শারীরিক অসুস্থতা বা পারিপার্শ্বিক জটিলতা, জীবনের নানা চাপ, জিনগত প্রবণতা ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিষন্নতা, উদ্বেগ, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।
মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয় ধরা পড়ে। আবার কখনো কখনো তা ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তবে প্রাথমিকভাবে যে লক্ষণগুলো দেখলে আমরা বুঝতে পারবো তা হলো কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহের অভাব, অতিরিক্ত ভয় পাওয়া, বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং মন খারাপ থাকা ইত্যাদি। নিম্নে আরো বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
পেজসূচিপত্রঃ মানসিক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
মানসিক রোগের সাধারণ লক্ষণ
- যেকোন সাধারণ বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা এবং সেটি নিয়েই সারাদিন পড়ে থাকা।
- অজানা কোনো কিছুর প্রতি ভয় বা দুশ্চিন্তা করা।
- শারীরিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বুক ধড়ফড় করা, বিনা পরিশ্রমে শরীর ঘামা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি।
- ঘুম ও খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম।
- সবসময় খারাপ চিন্তা করা ( যেমন আ*ত্মহ*ত্যার) চিন্তা করা।
- হঠাৎ মেজাজের পরিবর্তন যেমন অল্পতেই খুব রাগান্বিত বা খুব বিষন্ন হওয়া। এছাড়াও রয়েছে অতিরিক্ত আনন্দিত বা উত্তেজিত আচরণ (মেনিয়া) ।
- কোন ব্যক্তির প্রতি ভুল ধারণা (ডেলিউশন) পোষণ করা। যেমন মনে করা সে আমাকে ক্ষতি করতে চায় বা অতিরিক্ত হ্যালুসিনেশন হওয়া।
- পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবদের সময় না দিয়ে ঘরের চার দেয়ালকেই অতিরিক্ত প্রাধান্য দেওয়া।
- মাঠে গিয়ে খেলাধুলা না করে মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত থাকা।
- কারো সাথে কথা বলার সময় অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা।
- সর্বোপরি নিজের প্রতি অবহেলা করা ইত্যাদি।
মানসিক রোগের সাধারণ চিকিৎসা
- নিজের জীবনধারার পরিবর্তন আনা। যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা।
- ঘুমানোর জন্য একটি রুটিন তৈরি করা এবং সেই রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস্ত হওয়া।
- মেডিটেশন ও রিলাক্সেশন টেকনিক ফলো করা যেতে পারে।
- পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন করা তাদের সাথে কথা বলা।
- বিকেলে মাঠে গিয়ে সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা করা।
- নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া।
- নিজেকে সবসময় কোন কিছুতে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করা।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো মানসিক রোগের সাধারণ চিকিৎসা। তবে এগুলো ছাড়াও কিছু চিকিৎসা রয়েছে যেগুলোর জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। তবে আমাদেরকে চিকিৎসকের কাছে কখন যেতে হবে? অনেক সময় আমাদের কাছে মানসিক রোগের লক্ষণগুলো সাধারণ মনে হলেও তা গভীর কোন মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত বহন করে। সে ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ দু-সপ্তাহের অধিক ধরে চলমান থাকলে আমাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু থেরাপি নেওয়া যেতে পারে যেগুলো মানসিক রোগের জন্য কার্যকরী। যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপি (CBT), ডায়ালেকটিকাল বিহেভিয়র থেরাপি (DBT) ইত্যাদি।
সর্বোপরি মানসিক রোগ অন্য যেকোনো শারীরিক রোগের মত একটি চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা। সময়মতো সচেতনতা, পরামর্শ ও চিকিৎসা নিলে সুস্থ জীবন সম্ভব।
BD Health Net এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url